বেদযজ্ঞ সম্মেলনঃ—১৬/ ০৬/ ২০১৬ স্থানঃ
ঘোড়শালা* মুর্শিদাবাদ *পঃ বঃ
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ বেদযজ্ঞ করেই বেদপরমপুরুষকে জেনে জাগতিক দুঃখের হাত
থেকে মুক্ত হতে হবে ও জীবনকে বেদময় করে তুলতে হবে।]
কি এমন আমরা অপরাধ করেছি যে আমাদেরকে সত্য
থেকে বঞ্চিত হয়ে বার বার জন্মমৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে ও দুঃখ ভোগ করতে হবে?
এই চিন্তা করে বেদযজ্ঞ করলেই- আমরা দেখতে পাবো জীবনে দুঃখ আছে, সকল মানবজীবনেই এই
দুঃখ রয়েছে। দুঃখের অভিঘাতে জর্জরিত এই জীবনপ্রবাহ। দুঃখ আছেই, কিন্তু দুঃখকে
বিন্দুমাত্র কামনা করেনা কেহই। মানবজীবনের একান্ত ইচ্ছা ও প্রয়াস যাতে জীবনে দুঃখ
না আসে এবং তার বিপরীত সুখ যেন চিরকাল লাভ হয়। “ দুঃখং মে মাভূৎ সুখং মে
ভূয়াৎ”।(শ্রুতি) কিন্তু দেখা যায়, জগতের কোন সম্পদ মানুষের দুঃখ চিরতরে দূর করতে
পারেনা। যেজন্য জীবন দুঃখময়, যা পেলে মনে হয় দুঃখ আর থাকবে না, সুখময় হবে জীবন, সে
বস্তু পাবার পর দেখা যায় দুঃখ তো গেল না। এতেই এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয় যে,
জাগতিক কোন কিছুই আমাদের দুঃখ দূর করতে পারবে না। এর কারণ কি হতে পারে? মনে হয়,
পরম সুখময়, পরমানন্দময় একটি অনুভুতি আমাদের ছিল এবং তা জাগতিক নয়, তা আমরা হারিয়ে
ফেলেছি এখানে এসে। জাগতিক যদি হতো তবে জাগতিক সম্পদলাভে দুঃখ চলে যেতো। জগদতীত
একটি সত্তার সাথে, আনন্দ- স্বরূপের সাথে যুক্ত ছিলাম আমরা। সেই সত্তাকে না পেয়ে
জীবন দুঃখ ভারাক্রান্ত বেদনাময় হয়ে উঠেছে। সেই পরম সত্তাকে পুনরায় লাভ না হওয়া
পর্যন্ত এ দুঃখ যাবার নয়। একটি বৃক্ষে দুটি পাখী, একজন বদ্ধ ও অন্যজন মুক্ত। একজন
ফল খায়, অন্যজন দেখে। এই দুই পাখী পরস্পর প্রেমে বাঁধা। জীবাত্মা ও পরমাত্মা
পরস্পরের প্রেমের সখা। জীবাত্মার দুঃখ এই মিত্র ছাড়া কে বুঝবে? তাই বেদযজ্ঞ করেই
বেদের পরমপুরুষের সাথে সদায় যুক্ত থেকে দুঃখের হাত থেকে মুক্ত থাকতে হবে মানুষকে।
এবিশ্বে যা ভুত বা ভবিষ্যৎ সবই হলেন বেদের পরমপুরুষ। এই বেদের পুরুষের উপরে আর
দ্বিতীয় কিছু সত্য নাই। তিনিই মানবীয় সত্য, তত্ত্বমাত্র নন। দেবতাগণের উপরে এই
বেদের পুরুষের মহিমা। চণ্ডীদাস এই পরম পুরুষের কথা বলতে গিয়ে মানব সত্তার মধ্যেই
তাঁকে দেখতে পেয়ে বললেন—সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই। মহাভারতেও আমরা
পিতামহ ভীষ্মের উক্তিতে পায়—বেদের পুরুষের মহিমা- মানবরূপে। তাঁর প্রকাশ বহুভাবে
বিভিন্ন বেদ সংহিতায় ব্যক্ত হয়েছে। এ বিশ্ব তাঁরই মহিমা, কিন্তু তিনি তা হতেও বড় ও
মহান। এই বৃহতের সাথেই আমাদেরকে পুনঃ যুক্ত হয়ে দুঃখের হাত থেকে মুক্ত হতে হবে।
বেদযজ্ঞের মাধ্যমেই আমাদেরকে আমাদের বেদের পরমপুরুষের মহিমা কীর্তন করতে হবে—তবেই
আর আমাদেরকে এই জগতের জাগতিক কর্মফলের দুঃখ স্পর্শ করতে পারবে না। আমাদের মধ্যেই যে মানবিক সত্তা ও দেব সত্তা আছে
বেদযজ্ঞ করেই তার জাগরণ ঘটাতে হবে- তবেই আমরা আমাদের পাশবিক প্রবৃত্তি থেকে মুক্ত
হয়ে এক অনাবিল আনন্দের জগতে অবস্থান করবো-- বেদের আনন্দময় পুরুষকে সাথে নিয়ে। তাঁর
আশ্রয়ে থাকলে জীবকে জাগতিক কোন দুঃখই স্পর্শ করতে পারেনা। জয় বেদযজ্ঞের জয়।